অসভ্যতাই সভ্যতার জননী

অসভ্যতাই সভ্যতার জননী

“Savagery is the womb of civilization.”

মানব সভ্যতার ইতিহাস যদি আমরা গভীরভাবে পর্যালোচনা করি,তাহলে একটিই চিরন্তন সত্য প্রতিভাত হয়–সভ্যতা কখনোই সরলরেখায় গঠিত হয় নি।এর পিছনে রয়েছে সংঘাত,বিভেদ,রক্তপাত এবং নানাবিধ অসভ্যতা।তাই নিছক আবেগ নয়,বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই বলতে হয়,”অসভ্যতাই সভ্যতার জননী।”

প্রথমত,মানবজাতির অগ্রগতির পেছনে সবচেয়ে বড় অনুঘটক হচ্ছে সংকট।প্রকৃতির সাথে লড়াই,একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ,বিপদের মুখোমুখি হয়ে টিকে থাকার তাগিদ থেকেই মানুষ আগুন,চাকা,অস্ত্র,কিংবা ভাষার মতো মৌলিক আবিষ্কারগুলোর জন্ম দিয়েছে।মানুষ শান্তিতে থাকলে কখনোই এত উদ্ভাবনী হতে পারত না।তাই “অসভ্যতাই সভ্যতার জননী।”

দ্বিতীয়ত, সমাজে যেসব কিছু আমরা আজ”কল্ল্যাণকর” বলে বিবেচনা করি,তার উৎপত্তিপ বহুক্ষেত্রে “অকল্ল্যাণকর” বাস্তবতার প্রতিক্রিয়ায়।যেমন আইন এসেছে অপরাধ থেকে,নৈতিকতা এসেছে অনৈতিকতার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে, রাষ্ট্র এসেছে বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনে।এই ভাবে এক অশুভ সত্তা থেকেই শুভর জন্ম।

তৃতীয়ত,সভ্যতা গঠনের ক্ষেত্রে ‘পক্ষ-বিপক্ষ’ একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া।কেউ একদিকে কল্ল্যাণের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, আবার কেউ অকল্ল্যাণের ধারক বলে চিহ্নিত হয়।কিন্তু বাস্তবতা হলো,উভয়ই পরস্পর নির্ভরশীল।একপক্ষ ছাড়া অন্যপক্ষের অস্তিত্বের মানে থাকে না।এ দ্বন্দ্ব,এ সংঘর্ষই মানব ইতিহাসের চালিকাশক্তি।একে থামানো বা সম্পূর্ণভাবে সমাধান করা কখনোই সম্ভব নয়।

এই কারণেই মানবজাতি মরণাস্ত্র তৈরী করে,প্রযুক্তিকে অস্ত্র করে তোলে,নিজের রক্ষার পাশাপাশি আক্রমণের পথও খুঁজে নেয়।কেউ বলে অসভ্যতা এগিয়েছে, কেউ বলে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে–কিন্তু বাস্তবতা হলো,এই অগ্রগমন আর ধ্বংসপর্ব পরস্পরের পরিপূরক।

পরিশেষে,

সভ্যতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অসভ্যতার জ্বলন্ত মুখ।কিন্তু সেই মুখই সভ্যতাকে সামনে এগিয়ে নেয়।মানুষ যতবার নিজের অন্ধকার দিকের মুখোমুখি হয়েছে,ততবারই সে আলো খুঁজেছে।তাই সভ্যতা যদি আলো হয়,তবে তার উৎস সেই অন্ধকার,যাকে আমরা অসভ্যতা বলে নিন্দা করি।অতএব,ইতিহাসের নির্মোহ বিচারে বলা চলে–”অসভ্যতাই সভ্যতার জননী।”

আরো এরকম দেখতে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top