নিষিদ্ধ কাব্য

একবার নই
বারবার শতবার
আমি বিক্রি হই।

এখানে বিক্রির ধরণ এক নয়
কখন ভিন্ন ভিন্ন হয়।
আবার কখনবা
এক ও অভিন্ন হয়,
কাকতালিয় হয় বটে।

কখন বিক্রি হই মূল্যে
কখন অমূল্যে,অবমূল্যে
আবার কখনবা সাকুল্যে।
দেয়া-নেয়ার পৃথিবীতে
আমি যেন অনবরত বিক্রি হই।

এখানে ক্রেতা থাকে,
বিক্রেতা থাকে,
কেউ কেউ অবিক্রেতাও থাকে।
কেউ ক্রেতা হতে চাইলে
তড়িগড়ি না করে
আগে পুরদস্তর বিক্রেতা হয়ে যাও।

এখানে ক্রেতারা খুবই দূরদর্শী,
তারা কখনই আমায় কিনে না।
যদি না,আমি বিক্রি হতে না চাই,
যদি না আমি,
তাদের পাতা ফাঁদে পা না দেই।

কেউ বিক্রি হতে চাইলে
সঠিক দর-দামে বিক্রি হও।
যাচাই-বাচাই করে বিক্রি হও,
যেন ঠগার আগে ঠগে যেও না,
নইলে আম-ছালা দুটোই গচ্ছা যাবে।

চাঁদ,সূর্যের সৌন্দর্য ও ত্যাজ
অনুভব করতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।

আকাশের বিশালতা,মেঘের সৌন্দর্য
সমুদ্রের গভীরতা ও পাহাড়ের দৃঢ়তা
অবলোকন করতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।

মাটি,জল,ফুল-ফলের
ঘ্রাণ ও পিপাসা মিটাতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।

অন্যের বুদ্ধিতে চলতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
কাজের বিনিময়ে,অন্যের হুকুম মানতে,
কখনবা কারো কাছে কিছু জানতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।

অন্যের নিকট কিছু ধার চাইতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
বিনয়,ভদ্রতা ও সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।

দূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।

গান গাইতে বা শুনাতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
প্রেম চাইতে,বিরহ পাইতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
প্রথমবার প্রেয়সীর হাত ছুঁতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
“যদিদং হৃদয়ং মম,তদস্তু হৃদয়ং তব”
এই শাশ্বত মন্ত্র পাঠ করতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
কখনবা পরকীয়ায় জড়াতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।

আমি যখন বাঙালি হয়ে
অবাঙালি ভাষায় কথা বলি
তখনও আমি বিক্রি হই।

জনসভায় ভাষণ,রাজপথে স্লোগান
কিংবা স্লোগানে কণ্ঠ মিলাতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
স্বাধীনতা চাইতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।

কারো কারো কাছে বন্ধুত্ব করতে,
প্রতিবাদে খুনী হতে গিয়ে
কিংবা বিরহে আত্মত্যাগী হতে গিয়ে
আমি বিক্রি হই।
নিঃশ্বাস নিতে গিয়েও বাতাসের কাছে
আমি বিক্রি হই।

বিক্রি বিক্রি খেলায় আমি যখন ক্লান্ত হই
তখন আমি বিক্রি হই।
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি জন্ম-জন্মান্তরে
আমি যেন অনবরত বিক্রি হই।

আরো এরকম দেখতে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top