শীতের হাকালুকি
——–শতদল সরকার
নরম ঘাসের ডগায় একটি শিশির বিন্দু
যেন হাত বাড়ালেই মিলে প্রেমের সিন্ধু।
এই শীতে ঘন কুয়াশায়
গতরের চাদরে আছি ভাই আদরে।
তুমি এলে যাব মোরা দু’জনে
সবচেয়ে বড় বিল হাকালুকির হাওরে।
সেথায় দেখিব প্রত্যুষে
ধবল কুয়াশায় ধোঁয়া ওঠা জলে
বিলের বাঁকে বাঁকে অতিথি পাখির ঝাঁক।
করিতেছে খেলা,ওটা সেটা খেয়ে-দেয়ে
মনের সুখে করিতেছে কিচিমিচির হাঁক।
পৃথিবীর নানান দেশ হতে আগত
নানান রকমের কত বিচিত্র পাখি
তারা জাত পাত ভুলে মিলেমিশে
এক সাথে আনন্দে করিতেছে মাখামাখি।
যেন সখা-সখি মিলে একে অপরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে পরমানন্দে চোখে চোখে করিতেছে চোখাচোখি।
হেথায় অভিমান আছে,মান ভাঙানো আছে
শুধু বিছিন্নতা নাই,চির শত্রুতা নাই,নাই দলাদলি।
আছে শুধু বলাবলি,জড়াজড়ি আর,গলাগলি।
হাওরটিকে ছবির মত মায়ায়
জড়িয়ে রয়েছে ৬ কুড়ি ঝিল,১২ কুড়ি বিল
যেথায় মাছ ও পাখিরা করছে কিলবিল।
হাওর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে
পানি সহিষ্ণু গাছ,কতশত মহিষের বাথান।
এখানে প্রতিটি গাছ যেন প্রেম ঢেলে দেয়,
সেই প্রেমে স্নাত হয়ে রাখালেরা গাছের তলায়
নিশ্চিন্ত মনে বিশ্রাম নিচ্ছে গা এলিয়ে সটান।
এখানে বিল আর জল,
যেন প্রেমিক,প্রেমিকা
তারা করিতেছে প্রেমলীলা,
মন যেন করিতে চায় নিত্য খেলা।
দেখলে আহা মন জুড়িয়ে যায়
কি অপরূপ সৌন্দর্য হায়!
মোর মন যেন বারবার হায়!
মাছ ও পাখিদের মত হতে চায়।
ঘন ঘোর অন্ধকার,মায়ায় জড়ানো অন্ধকার,
ঘন কুয়াশায় ধোঁয়া ওঠা বিলের জলেতে
পাখিদের বড়ই সুন্দর লাগছে দেখিতে।
ধোঁয়া উড়ছে,ধোঁয়া উড়ছে,কুয়াশার ধোঁয়া,
যেন বিশাল চুলায় বসানো চায়ের কেটলির মত,
খানিক দূর হতে পাখিগুলোকে দেখতে লাগছে
জ্বলন্ত চুলায় চা পাতার বড় বড় দানার মত।
পাখিরাও পরস্পর গা ঘেঁষাঘেঁষিতে রত
চায়ের লিকার ছাড়ার আগে
চা পাতার দানাগুলো ফুটছে যেন অনবরত।
ধোঁয়া,ধোঁয়া,ওঠছে কুয়াশার ধোঁয়া,
মনে হয় তুমি আমি হাত ছেড়ে দিলেই যাব খোয়া।
যদিও এখানে হারিয়ে যেতে নাই মানা
প্রেম যেন হেথায় মেলেছে অবারিত ডানা।
এ হাওর ভূমি যেন স্বর্গের লীলাভূমি,
যেথায় হাওর আর আকাশ নিত্যি করে চুমাচুমি।
এখানে বিল আর জল একাকার টলমল
যেন প্রেমিক,প্রেমিকা সদায় করে ঝলমল
তারা একজন ছাড়া আরেকজন বাঁচে না।
তারা প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে দিচ্ছে অপার সৌন্দর্য
তুমি এলে যাব মোরা দেখিতে সেই ঐশ্বর্য।
জীব বৈচিত্র্যের অটেল সম্ভার
পানকৌড়ির ডুব,অবাধ সাঁতার।
যেন নব বধূ লজ্জায় মুখ ঢাকে বারবার,
বালি হাঁস উড়ে যায়,ফিরে আসে আরবার,
এখানে সৌন্দর্য যেন বসিয়েছে মহা কারবার।
