ইনবক্স

তারপর একদিন হঠাৎ মেয়েটা ছেলেটার ইনবক্সে এসে বসে থাকে…
দুজন গল্প করে, আনন্দের গল্প, ভালো থাকার গল্প!
একটাসময় মেয়েটা বলে, পারুকে চেনো?! কবির পারু; কবিতার পারু।
ছেলেটা প্রতিউত্তরে লিখে, ‘ ক্যামন আছে সে?’
মেয়েটা বলে, ”ক্যামন আর থাকবে! কবিতার চৌকাঠে কে যেনো পারু পারু বলে চিৎকার করে; বেচারি আজকাল কবিতাংকে ভোগে।
ছেলেটা চুপচাপ!
মেয়েটা আরো বলে, “আমি যদি দেবী নেইথের মতো ক্ষমতাধর হতাম তাহলে দেবদাসদের কথাবলার শক্তি কেড়ে নিতাম! কিংবা মহাকালের উপন্যাস থেকে এই অভিশপ্ত চরিত্রটাই মুছে ফেলতাম!
একজীবন নিজে কষ্ট পাওয়া এবং আশপাশের মানুষদের কষ্ট দেওয়ার তো কোনো মানে নেই!…….
মেয়েটা বলতেই থাকে।
ছেলেটা নৈশব্দ্যে শুনে…
ক্রমশ রাত গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়, তিয়াত্তর দিন পূর্বের কোনোএক রাত।

২.
তিয়াত্তরটা বিকেল সন্ধ্যায় গড়ানোর পর ইনবক্সে পুনরায় মেয়েটির তিনশব্দের বার্তা,
‘প্লিজ কিছু লিখো’
প্রতিউত্তরে ছেলেটি একটা ‘ইমুজি’ পাঠায়; ইমুজিটা হাসির…
মধ্যরাত। মেয়েটির চোখ পড়ে আছে ইনবক্সে সদ্য আগত ইমুজিতে; আর মুখে নোঙ্গর করেছে হাসি আর কান্নার সীমান্তবর্তী এক রহস্যময় ছায়া। এই ছায়া পৈশাচিক আনন্দের! এই ছায়া মন কেমন করা বেদনার! এই ছায়া আক্ষেপ কিংবা অপারগতার…
রাত বাড়ছে….
শরৎবাবুর কালজয়ী দেবদাস চরিত্রটাকে প্রচন্ড অপছন্দ করা মেয়েটা আজ কবিতার স্টেশনে কান পেতে বসে আছে-
ব্যাপারটা কিঞ্চিৎ আশ্চর্যজনক হলেও ছেলেটা একটুও আশ্চর্য হচ্ছেনা। ভালোবাসা কিংবা মায়া কখনো কখনো মানুষকে যুক্তি-বুদ্ধি বা বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে গন্তব্যহীন পথে পা বাড়াতে প্ররোচিত করে। ছেলেটার আশ্চর্য না-হওয়ার কারণ সে অনেক আগেই এই স্টেজ পার করে এসেছে।

৩।
মেয়েটা ছেলেটার পাঠানো ইমুজিটার দিকে তাকিয়ে থাকে,
যেনো এটা একটা জীবন্ত কবিতা
যেনো এটা একটা যন্ত্রণার উপন্যাস…
আস্তে আস্তে মেয়েটার মনটা ক্যামন যেনো অস্থির হয়ে উঠে!
এই অস্থিরতা দায় কিংবা দ্বিধা’র
এই অস্থিরতা অপারগতার-
বস্তুতঃ ‘সম্পর্কের পিঠ ভেঙ্গে, ভাঙ্গা পিঠে রোপে দেওয়া সামাজিক সম্পর্কের দেয়াল টপকানোর সাধ্য নেই মেয়েটার’
ততক্ষণে ইনবক্সে আরো একটা ম্যাসেজ এসে জমা হয়েছে। ছেলেটা লিখেছে-

”তোমার মেয়েটার হাসি স্বর্গের মতো সুন্দর। ক্যামন আছে সে?”

ম্যাসেজটা সীন করতেই মেয়েটার মনে পড়ে সে এখন কারো ‘মা’। মায়েদের স্বপ্ন কিংবা ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষাগুলো লজ্জাবতী ফুলের মতো, সন্তান ‘মা’ বলে ডাকতেই মায়েদের যাবতীয় স্বপ্ন, ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা চুপসে যায়। সন্তানের নির্ভার মুখ দেখলে মায়েদের যাবতীয় দুঃখ হাওয়া হয়ে যায়।
ইনবক্স থেকে চোখ সরিয়ে মেয়েটা সন্তানের কচি মুখে চোখ রাখে। তার মনে হয় এই মুখটা দেখে দেখে সে দু’চারটা জীবন অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারবে…

মেয়েটা প্রতিউত্তরে লিখে, ”হুম। সে ভালো আছে। এমন একটা স্বর্গ চোখের সামনে থাকলে আনন্দেই একটা জীবন পার করে দেওয়া যায়।”
ছেলেটা মেয়েটার ইনবক্সে আবারো একটা ইমুজি পাঠায়। মেয়েটার মনে হয়….
এই ইমুজিটা হাসির!
এই ইমুজিটা আনন্দের!
এই ইমুজিটা প্রশান্তির!
রাত গভীর থেকে ক্রমশ গভীরতর হয়, তিয়াত্তর দিন পরের কোনোএক রাত।

আরো এরকম দেখতে

ত্রুটি

একদা বহুকাল পূর্বে একটি রাজ্য ছিল।রাজ্যের একজন রাজা ছিল।রাজা খুবই প্রজা বাৎসল্য,উদার

আরো দেখুন »

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top